ড. আকবর আলী খান বলেছেন, “বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আজ দেশ থেকে নির্বাসিত। মানুষকে ক্ষমতার কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করার কোন তাৎপর্য নেই।”
মঙ্গলবার বিকেলে বাংলা একাডেমী আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত জীবনী’ শীর্ষক গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এটি শুধু অসমাপ্ত আত্মজীবনী নয়, অসমাপ্ত জীবনের কথামালাও বটে। বাংলার প্রমিথিউস শেখ মুজিবের সংগ্রামী জীবন ও কর্মের একটি ছাপচিত্র এই আত্মজীবনী। অকপট আত্মসমালোচনা এই আত্মজীবনীর প্রামাণ্যতা বৃদ্ধি করেছে। মানুষের প্রতি নিরঙ্কুশ ভালোবাসার প্রমাণ এই বইয়ের সর্বত্র ব্যাপ্ত। নিজের সবলতা-দুর্বলতা উভয়ই বঙ্গবন্ধু এই বইয়ে তুলে ধরেছেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। আলোচনায় অংশ নেন আতাউস সামাদ, ড. আকবর আলী খান, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মোহাম্মদ এ আরাফাত প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমীর সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
স্বাগত ভাষণে শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস বঙ্গবন্ধুর এ আত্মজীবনীতে বিধৃত আছে। বাংলার সমাজ-রাজনীতির ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি এই আত্মজীবনীতে অত্যন্ত বিশ্বস্তভাবে লিপিবদ্ধ আছে।
তিনি বলেন, খুব শীঘ্রই বঙ্গবন্ধুর ডায়েরি, ভ্রমণকাহিনি এবং আরো কিছু অপ্রকাশিত রচনা পুস্তকাকারে প্রকাশিত হবে যা তাঁর ব্যক্তিসত্তাকে আমাদের সামনে নতুন করে তুলে ধরবে।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার হলেও এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি চক্রান্তের মুখোশ আজও উন্মোচিত হয়নি। এই হত্যাকান্ডের গোপন দলিলপত্র অবিলম্বে জনসম্মুখে প্রকাশ করা জরুরি। বঙ্গবন্ধু যে ইন্দ্রজালিক ক্ষমতা দিয়ে জনগণের মধ্যে থেকে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এবং জনগণের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন তার নেপথ্য ইতিহাস এই আত্মজীবনীতে পাওয়া যাবে। এই বইয়ের মধ্যে একজন জাতীয়তাবাদী, আদর্শবাদী মানুষের মানসবিবর্তনও শনাক্ত করা সম্ভব হবে। মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, উদারতা ও আপোষহীনতা উভয়ের বিরল সসমন্বয়ে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন সমকালীন বিশ্ব ইতিহাসের একজন অসামান্য ব্যক্তিত্ব। ৭ই মার্চের ভাষণ উপহার দিয়ে তিনি পরিণত হয়েছেন ‘রাজনীতির কবি’তে। শুধু কৌশলের রাজনীতি দিয়ে যে মানুষের কল্যাণ সাধন সম্ভব নয় তা তিনি বিশ্বাস করতেন। তাই আদর্শের রাজনীতিতে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। আতাউস সামাদ বলেন, অসমাপ্ত আত্মজীবনী আবিষ্কার একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। আজন্ম সংগ্রামী মানুষটির অবয়ব এ বইটি পাঠের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হবে। রাষ্ট্র-দল ও রাজনীতির উর্ধ্বে মানুষ শেখ মুজিব এই আত্মজীবনীতে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী একটি ব্যতিক্রমী বই। অসামান্য হৃদয়বত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই বইয়ে। শুধু রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ বা বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ নয় সাধারণ মানুষের কথাও সমগুরুত্বে এ বইয়ে স্থান পেয়েছে। রাজনীতি ছাপিয়ে গণ-মানুষের কথাই বাক্সময় হয়েছে যেমন তাঁর জীবনে তেমনি এই অসামান্য আত্মকথায়।সকাল ১১:০০টায় একাডেমীর সেমিনার কক্ষে ‘আমাদের বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক শিশু-কিশোর বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় ৩৪জন এবং খ-শাখায় ৩২জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। ক-শাখায় প্রথম স্থান অধিকার করে মাহিমা রহমান (রিন্তু), দ্বিতীয় স্থান তাসমিয়াহ তাফরিন এবং সুমাইয়া মাহজাদীন মিম তৃতীয় স্থান অধিকার করে। খ-শাখায় প্রথম স্থান অধিকার করে সানজিদা রশীদ, দ্বিতীয় স্থান মোঃ কাজিম রেজা চৌধুরী এবং সেঁজুতি সীমান্ত তৃতীয় স্থান অধিকার করে। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রত্যেককে স্মারক পুরস্কার হিসেবে বাংলা একাডেমীর প্রকাশনা প্রদান করা হয়। বিজয়ীদের আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার প্রদান করা হবে।